বৈদেশিক রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে ও দক্ষ-প্রশিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তুলার ক্ষেত্রে শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) অতুলনীয় ভুমিকা পালন করছে। এটি শেরপুর জেলার নকলা উপজেলাধীন গনপদ্দী ইউনিয়নের গনপদ্দী এলাকায় অবস্থিত।
শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবনারীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করে দেশে বেকারত্ব নিরসনের লক্ষ্যে বিনামূল্যে সল্প মেয়াদী বিভিন্ন কোর্সের কারিগরি প্রশিক্ষন দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সল্প মেয়াদী বিভিন্ন কোর্সের মধ্যে ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স ও মোটর ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেন্যান্স কোর্সের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, যা বর্ণনাতীত।
এই কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রতি ৩/৪ মাস পর পর শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী হাতে কলমে ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স ও মোটর ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেন্যান্স কোর্সের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। অনেক শিক্ষিত বেকার এখান থেকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে পরিণত হয়ে আজ তারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে বাংলাদেশে বৈদেশিক রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষের উন্নয়ন দক্ষ হবে জনগণ’ এই প্রত্যয় নিয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অধীনস্থ নকলা উপজেলার গনপদ্দী ইউনিয়নে স্থাপিত শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে (দেশ-বিদেশ) ৩ মাস মেয়াদী কোর্সে ৮০ জন ও মোটর ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেন্যান্স (সেইপ) ৪ মাস মেয়াদী কোর্সে আরো ৪০ জন প্রশিক্ষনার্থী ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ্য ৩/৪ মাস প্রশিক্ষণ শেষে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারী) লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চূড়ান্ত পরীক্ষায় ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স (দেশ-বিদেশ) কোর্সের ৮০ জনের সবাই উপস্থিত থাকলেও মোটর ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেন্যান্স (সেইপ) কোর্সের ৪০ জনের মধ্যে ২জন প্রশিক্ষাণার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। এহিসেব মতে উভয় কোর্সের মোট ১১৮ জন প্রশিক্ষানার্থী চুড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন।
এ পরীক্ষার অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৯টার সময় শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি)’র তৃতীয় তলায় লিখিত পরীক্ষা, অনুষ্ঠিত হয়। পরে গনপদ্দী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তিনটি ট্র্যাকে ব্যবহারিক পরীক্ষা ও নির্ধারিত স্থানে মৌখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসব পরীক্ষার সার্বিক তদারকিতে ছিলেন শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)-এর অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান।
শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা সমূহের সরাসরি তত্বাবধানে ছিলেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) শেরপুরের মটরযান পরিদর্শক আবু পলাশ, শেরপুর জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই, শহর ও যানবাহন শাখা) মো. নাছিমুল হায়দার ও শেরপুর বিআরটিএ’র মেকনিক এ্যাসিসটেন্ট ফজলুর রহমান।
এছাড়া লিখিত, ব্যবহারিক ও মৌখিত পরীক্ষা গ্রহনে সার্বিক সহায়তায় ছিলেন টিটিসি’র ট্রেড ইনচার্জ এ কে এম শাহজাহান, ইন্সট্রাক্টর শফিকুল ইসলাম, দেশ-বিদেশ শাখার ড্রাইভিং প্রশিক্ষক বাবুল শেখ (অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা) ও সেইপ শাখার ড্রাইভিং প্রশিক্ষক মোশাররফ হোসেন। এসময় চীফ ইন্সট্রাক্টর এস.এম আজহার, ইন্সট্রাক্টর ইসমাইল হোসেন ও কামরুল হাসানসহ অন্যান্য ইন্সট্রাক্টর ও শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ, শতাধিক নারী-পুরুষ প্রশিক্ষাণার্থী উপস্থিত ছিলেন।
টিটিসি’র অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান জানান, দেশে যেহারে শিক্ষিত যুবক ও যুবনারী বাড়ছে, ঠিক সেই হারেই ক্রমাগত ভাবে বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা; কিন্তু সেই তুলনায় কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। ক্রমবর্ধমান এই বেকারদের কাজে লাগাতে না পারলে শিক্ষিত যুবক ও যুবনারীরা কোন একসময় দেশের সম্পদের পরিবর্তে বুঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাইতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত বেকারদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনে গ্রাম পর্যায়েও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমন একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হলো শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)।
এ টিটিসিতে ভর্তিকৃত দূরের প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য আবাসিক সুবিধা এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক জাতীয় দক্ষতা মান লেভেল-১ সনদপত্র অর্জন, দেশে-বিদেশে চাকরি প্রাপ্তিতে সার্বিক সহায়তা প্রদান, আধুনিক ল্যাব ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতী সুবিধা, বিদেশগামী প্রার্থীদের বিএমইটি’র রেজিষ্টেশন সহায়তা ও পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয় এবং হবে বলে শেরপুর টিটিসি’র অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসানসহ টিটিসি সংশ্লিষ্ট অনেকে জানিয়েছেন।