স্টাফ রিপোর্টার:
শেরেপুর জেলার নকলা উপজেলায় স্কুল পড়ুয়া ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে বাল্যবিবাহ করানোর অপরাধে ও বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করার উদ্দেশ্যে বরের বাড়িতে রেজিষ্ট্রার বহিসহ হাজির হওয়ায় বরের মা ও এক কাজীর সহকারীকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫০ হজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে উপজেলার পাঠাকাটা ইউনিয়নের পাঠাকাটা গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
উপজেলার পাঠাকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে বাল্যবিবাহ করানোর অপরাধে বরের মা-কে ২৫ হাজার টাকা ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের কাজী ঝিকরুল হকের সহকারী আবু বক্কর সিদ্দিককে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদুর রহমান। সেইসাথে আর কোন ছেলে-মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিবেন না ও রেজিষ্ট্রেশন করবেন না মর্মে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য ও সহকারী কাজীর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭-এর ৮ ধারায় বরের মা ও সহকারী কাজীকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। পাঠাকাটা ইউপির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফয়েজ মিল্লাতসহ স্থানীয় ইউপি সদস্য, নকলা থানার এস.আই আব্দুস সাত্তারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও এলাকার কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ ভ্রাম্যমান আদালতকে সহায়তা করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাল্যবিবাহে কঠুর আইনী বাধা থাকা সত্ত্বেও প্রায় দেড়মাস আগে পাঠাকাটা ইউনিয়নের বহুর্দী গ্রামের মো. হুমায়ূন কবিরের ছেলে রাজু মিয়া (২০)-এর সাথে একই ইউনিয়নের পাঠাকাটা গ্রামের মোস্তুফা মিয়ার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে গোপনে মৌখিক ভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই কনেকে বরের বাড়িতে পাঠানো হয় এবং বরের বাড়িতে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য ঝিকরুল কাজীর সহকারী আবু বক্কর সিদ্দিককে খবর দিলে তিনি রেজিষ্টার বহি নিয়ে বরের বাড়িতে হাজির হন।
পাঠাকাটা ইউপির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফয়েজ মিল্লাত বলেন, যেহেতু সামাজিক ভাবে ও ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক দেড় মাস আগেই গোপনে বিয়ে হয়েগেছে এবং বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে। সেহেতু এখন আর এ বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই কনে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বরের বাড়িতে পাঠানো নিষেধ করাসহ কনের বাড়িতে বরের আসা-যাওয়া নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। এ মর্মে উভয় পরিবারের অভিভাবকের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে বিষয়টি মাঝে মধ্যে তদারকি করতে ইউএনও জাহিদুর রহমান তাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এলাকার কোন ছেলে-মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে যেন বিবাহ না হয়, সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য ও উপস্থিতিদের মৌখিক অঙ্গীকার করান ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদুর রহমান। নির্বাহী বিচারক ইউএনও জাহিদুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে নকলাকে জেলার প্রথম বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব, এ উপজেলায় একটি বাল্যবিবাহও কোন ভাবেই কাম্য নয়। নকলা উপজেলায় বাল্যবিবাহের কোন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট পরিবারের অভিভাবক, বর, আয়োজক ও কাজীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে আইনি ভাবে কোন প্রকার আপোষ নেই। বাল্যবিবাহ নিরোধ ও বন্ধে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগসহ বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সংশ্লিষ্টরা সদা তৎপর রয়েছেন বলে জানান নির্বাহী বিচারক ইউএনও জাহিদুর রহমান।