শিক্ষক কর্মচারীদের যৌক্তিক ও ন্যায্য ৩ দাবী আদায়ের আন্দোলনকে শতভাগ কার্যকর করতে এমপিও ভুক্ত সকল স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে একসাথে কাজ করে আন্দোলনকে আরো জোরদার করার আহবান জানানো হয়েছে। সোমবার দুপুরের দিকে নকলা শাহরিয়া ফাজিল মাদ্রাসার মিলনায়তনে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ ও উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা মো. আজিজুল ইসলাম-এর সভাপতিত্বে এক সভা এই আহবান জানানো হয়।
সভায় চৌধুরী ছবরুন নেছা মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক, বারমাইসা দাখিল মাদ্রাসার সুপার জমিয়তুল মুদারেছিন উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. আতাউর রহমান, উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোবারক হোসেন, কৃষ্ণপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. রুকনুজ্জামান, চিথলিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. শফিকুল ইসলাম, কায়দা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. উলি উল্লাহ, কৃষ্ণপুর দাখিল মাদ্রাসার সহসুপার মাওলানা মো. হযরত আলী, শাহরিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা মো. আব্দুল হালিমসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা জানান, শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের চলমান আন্দোলন কারো ব্যক্তিগত বা কোন নিদিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বা নিদিষ্ট কোন সংগঠনের নয়। এই আন্দোলন সারা দেশের এমপিও ভুক্ত সকল স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারদীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের যৌক্তিক আন্দোলন। এখানে কোন দল-মত বা এলাকা বিবেচ্য নয়। এই আন্দোলন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ, মেডিক্যাল ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা ও কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার আদায়ের ন্যায্য দাবি। দাবি আদায় হলে এর সুফল ভোগ করবেন সকল এমপিও ভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা। সুতরাং এই আন্দোলন সশতভাগ সার্থক করে তুলতে হলে কোন দলীয় বা প্যানেল বিবেচনা করা ঠিক হবেনা। এক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয় একটাই আমরা সবাই এমপিও ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী। এই বিষয়টি মাথায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আহবান জানান বক্তারা।
তারা বলেন, অনেক শিক্ষক-কর্মচারী দাবী আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু অনেকেই বিভিন্ন কারনে জাতীয় শহীদ মিনারের আন্দোলনে সামিল হতে পারেননি। ঢাকার সমাগম যত বড় হবে, দাবি আদায়ের পথ তত সহজ হবে। তাই ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষকদের ঢাকায় যেতে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। প্রয়োজনে পর্যাক্রমে শিক্ষক-কর্মচারী পাঠানো যেতে পারে বলে তারা মন্তব্য করেন। এছাড়া ইউএনও, থানার ওসিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রয়োজনে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে অনুমতি সাপেক্ষে অন্যান্য জেলা-উপজেলার মতো নকলাতেও শান্তিপূর্ণ ভাবে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করা যেতে পারে; যা নাগরিকের অধিকার। এছাড়া ইউএনও’র মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাসহ শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করা যেতে পারে। তাতে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানতে পারবেন।
তাই আগামী ২ দিনের মধ্যে উপজেলার এমপিও ভুক্ত সকল স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তার করা হয়। পরে ওই কমিটি ইউএনও, থানার ওসিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের সাথে কথা বলে অন্যান্য জেলা-উপজেলার মতো নকলাতেও শান্তিপূর্ণ ভাবে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করবেন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নাগরিক অধিকারের অংশ মানববন্ধনের অনুমতি পেলে সুবিধাজনক দিনে শন্তিপূর্ণ মানববন্ধন করা হবে এবং উপজেলা থেকে প্রতিদিন একটি বাসে পর্যায়ক্রমে অন্তত ৪০-৫০ জন করে শিক্ষক-কর্মচারী ঢাকার আন্দোলনে যোগদিতে অনুরোধ করা হবে। আর যদি অনুমতি না পাওয়া যায় তাহলে প্রতিদিন ২টি বাসে পর্যাক্রমে ৮০-৯০ জন করে শিক্ষক-কর্মচারী ঢাকার আন্দোলনে অংশগ্রহন করতে যাবেন মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে বক্তারা জানান।
এছাড়া ন্যায্য দাবি মেনে নিতে কালক্ষেপণ করায় শিক্ষাখাতে যে ক্ষতি হচ্ছে, এর দায় সরকারকে বহন করতে হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন তাঁরা। তবে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘সরকার নিশ্চয়ই শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি ৩টি মেনে নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরাবেন।’
এসময় উপজেলার এমপিও ভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান, সুপার, সহসুপারসহ সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।