বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শেরপুরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি’র জেলা কমিটি গঠন: সভাপতি নজরুল, সম্পাদক হযরত নকলায় ফাহিম চৌধুরীর গণ সংযোগ ও পথসভায় জনতার ঢল নকলায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের আহবান নকলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন’র মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন ছাত্রনেতা জুবায়েদ হত্যার বিচার দাবিতে নকলায় কলেজ ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা পানিফলে কয়েকগুণ লাভ, বানিজ্যিক ভাবে চাষে ঝুঁকছেন কৃষক নকলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন আর নেই নকলায় শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন জোরদারে স্থানীয় পর্যায়ে করনীয় বিষয়ক সভা আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে একমত পোষণ করে বিএনপি’র বিবৃতি

পানিফলে কয়েকগুণ লাভ, বানিজ্যিক ভাবে চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
  • প্রকাশের সময় | সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১০১ বার পঠিত

নামমাত্র শ্রমে ও অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় শেরপুরের নকলা উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে পানিফলের চাষ। ফলটি সুস্বাদু হওয়ায় বেড়েছে জনপ্রিয়তা। সুস্বাদু এই ফলটি সহজে বাজারজাত করা যায়। পানি নিষ্কাশিত না হওয়া জলাবদ্ধ এলাকায় অন্য কোন আবাদ করা সম্ভব নয়, এমন পতিত জমিতে খুব সহজেই পানিফল চাষ করা যায়।

অল্প খরচে উৎপাদন বেশি ও লাভজনক হওয়ায় পানিফল চাষে ঝুঁকছে প্রান্তিক কৃষকরা। জলাবদ্ধ জমিতেই এই ফলের চাষ হয়। ভোগান্তিও কম, কিন্তু ফলন বেশি পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় পানিফল চাষে কয়েকগুণ লাভ পাচ্ছেন চাষীরা। এতে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে এই ফল চাষে আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন বাণিজ্যিক ভাবে পানিফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক।

গত দুই দশক ধরে নকলার চরাঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিক ভাবে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অনেক প্রান্তিক কৃষকদের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা।

চাষীরা জানান, পানিফল মানুষের কাছে অতি পরিচিত। এটি স্থানীয়দের কাছে পানিসিংড়া নামে পরিচিত। জলাবদ্ধ পতিত জমিতে এই ফলের চাষ হয়। পাতার গোড়া থেকে শিকড়ের মতো বের হয়ে বংশ বিস্তার করে ও শিকড়েই ফল ধারণ করে। এ ফল চাষে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। সার ও কীটনাশকের পরিমাণও কম লাগে। মূলত বর্ষা মৌসুমেই পানিফল চাষ করা হয়।

এখন শুধু গ্রামে নয়, শহরের বাজারেও পানি ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধ জমিতে পানি ফলের কাটিং চারা রোপণ করেন চাষিরা। আর অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাসের শেষ পর্যন্ত পানিফল উৎপাদন শুরু হয়। চাষীরা জানান, এ ফল চাষের জমি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডোবা, বদ্ধ জলাশয় বা মাছের ঘেরের মতো সুবিধাজনক স্থান। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে পানিফল চাষ করা যায়। পানিফল গাছ কচুরিপানার মতো পানির উপরে ভেসে থাকে। এর শেকড় থাকে পানির নিচে ও পাতা পানির উপরে ভাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ ও পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। নকলায় পানি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে।

ফলটির খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাস। কাঁচা ফলের এ নরম শাসটি খেতে বেশ সুস্বাদু। এর ইংরেজি নাম Water chestnut ও উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Trapa bispinosa. তথ্য মতে, পানিফলের আদি নিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোনা, উরফা, গণপদ্দী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বানিজ্যিক ভাবে পানিফল চাষ করা হয়েছে। তবে পাঠাকাটা ইউনিয়নের কৈয়াকুড়ি, পলশকান্দি, দশকাহনিয়া, তাতড়াকান্দা ও নামা কৈয়াকুড়ি এলাকায় বেশি চাষ করা হয়েছে। এছাড়া চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোনা, উরফা, গণপদ্দী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বদ্ধ জলাশয়ে ও পুকুরে পানিফল চাষ করা হয়েছে।

নামা কৈয়াকুড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন চাষী তাদের জমি থেকে পানিফল সংগ্রহ করছেন। প্রতি বছর এই গ্রামে ১০ থেকে ১৫ জন কৃষক পানিফল চাষ করেন। তাদের মধ্যে এবছর খোকন মিয়া ৩০ শতাংশ জমিতে, ইসলাম মিয়া ২৫ শতাংশ, আবুল হোসেন ৪০ শতাংশ, আনারুল ইসলাম ২০ শতাংশ, শাখাওয়াত হোসেন ২৫ শতাংশ ও আমির উদ্দিন ২০ শতাংশসহ অনেকেই পানিফল চাষ করেছেন।

চাষী খোকন মিয়া জানান, পতিত পুকুর ও ডোবা-নালায় বর্ষাকালে অল্প পরিমাণ পানি থাকে এমন নিচু জমিতে পানি ফলের উৎপাদন ভালো হয়। তবে প্রতিদিনই জমি থেকে পানিফল সংগ্রহ করতে হয়। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে বীজ বা কাটিং করা গাছ রোপন করা হয়। রোপনের তিন মাস পর থেকেই উৎপাদন শুরু হয়। ৩-৪ মাসিক প্রতিটি পানিফল গাছ হতে ৫-৬ বার ফল তুলা যায়। পানি যত বেশি হয় ফলন তত ভালো হয় বলে জানান চাষীরা।

নামা কৈয়াকুড়ি এলাকার বুলবল আহমেদ জানান, এইফল চাষের ফলে নিচু পতিত জমি ও বদ্ধ জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন মৌসুমী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক প্রান্তিক চাষী অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বা বাৎসরিক চুক্তি নিয়ে সেখানে পানিফল চাষ করে স্বাবলস্বী হয়েছেন। মাছ ও পানিফল বিক্রি করেই নামা কৈয়াকুড়ি এলাকার অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাছ ও পানিফল বিক্রির জন্য খাল-বিলের তীরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী বাজার। এসব বাজারে সস্তাফল হিসেবে পানিফল প্রচুর বিক্রি হয়। একবিঘা জমিতে পানিফল চাষে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ থাকে। কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠ পোষকতা বাড়ালে ও সহজ শর্তে কৃষি ঋণ পেলে দেশের জলাবদ্ধ অনাবাদী ভূমিতে পানিফল চাষের মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খন্দকার দাওয়াখানার স্বত্বাধিকারী হাকিম খন্দকার জসিম উদ্দিন জানান, পানিফলে পুষ্টিমানের পাশাপাশি ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি এলার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগের উপশম কারি একপ্রকার ভেষজ ফল। তাছাড়া তলপেটের ব্যাথা, পিত্তপ্রদাহ, উদরাময় ও ক্ষতিকর পোকার কামড়ে এর শাঁস প্রলেপ বেশ উপকারী।

পাইকারি বিক্রেতা বাজু মিয়া, কাদির, হানি মিয়া ও মোতালেবের মত উপজেলাতে ৩০-৩৫ জন পাইকার ও ৮০ থেকে ৯০ জন খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এ ফল বিক্রি করে বছরের ৩-৪ মাসের সংসার খরচ চলে তাদের।

এইফল আবাদের সঠিক পরিমাণের তথ্য না থাকলেও উপজেলাতে এবছর প্রায় শত একর জমিতে পানিফল চাষ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান, পানিফল রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় এটি নিরাপদ। জলাবদ্ধ যে সব জমিতে আমন ধান বা অন্যান্য আবাদ করা সম্ভব নয়, সেসব জমিতে পানিফল চাষ করে প্রান্তিক কৃষকরা তাদের দিনবদল করতে পারেন বলে তিনি মনে করেন। যে কেউ জলাবদ্ধ পতিত জমিতে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে মন্তব্য করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102