শেরপুরের প্রতিনিয়ত কোন না কোন এলাকায় মোটরসাইকেল ও ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা চুরির ঘটনা ঘটছে। চুরে যাওয়া মোটরসাইকেল ফেরত পাওয়ার নজির কম থাকলেও, সংরক্ষণ করার অভাবেই হয়তোবা মাঝেমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা।
এবার ফেসবুকের কল্যাণে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা ফেরত পেয়েছেন শেরপুর সদর উপজেলার চৈতনখিলা বটতলা এলাকা থেকে চুরে যাওয়া এক আটো চালক। ভাগ্যবান ওই অটো চালকের নাম ফারুক আহমেদ (ডল মিয়া)। তবে খোলে নেওয়া হয়েছে সব কয়টি (৫টি) ব্যাটারি ও কন্ট্রোল বক্স। যার বাজার মূল্য লক্ষাধিক টাকা। এছাড়া রাস্তা থেকে অটোটি বিলে উল্টে ফেলে দেওয়ায় ভেঙ্গে গেছে বাম্পার।
তাছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, থানা পুলিশের বরাত দিয়ে বেতমারীর স্থানীয় বাটপার শ্রেনির কয়েকজন লোক ওই দরিদ্র অটো চালকের কাছে ২ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন!
ডল মিয়া জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়েসহ ৪ সদস্যের পরিবার চলে আটো চালানোর আয়ে। তার আয়ের একমাত্র মাধ্যম ব্যাটারি চালিত একটিমাত্র অটো রিক্সা। সে গত মঙ্গলবার রাত ৭টার দিকে বাড়ির সংলগ্ন রাস্তায় অটো বন্ধকরে রেখে বাড়ির ভিতরে যান। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের ব্যবধানে তার অটোটি চুরি করে নিয়ে যায় চোরচক্র। ওই রাতে অনেক খোঁজাখোঁজির পরে নিরাস হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
এরপরের দিন ‘ভীমগঞ্জ বাজার প্রতিদিন’ নামে ফেসবুক পেইজে ‘অটো গাড়ির ব্যাটারি চুরি করে গাড়িটিকে বেতমারী বিলে ফেলে রেখে পালিয়েছে চোরচক্র’ এই শিরোনামে একটি লেখা পোস্ট করা হয়। স্থানীয় সূত্রের বরাতে সেখানে লেখা হয়, ‘গতরাতে অজ্ঞাত কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ফেলে রাখা অটো গাড়ির মালিকের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে গাড়ির নাম্বার প্লেট ও পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া মালিকানা লাইসেন্স দেখে ধারণা করা হচ্ছে গাড়িটি শেরপুর সদর উপজেলার ৬নং পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কোনো ব্যক্তির হতে পারে। যদি কারো পরিচিত ব্যক্তির গাড়ি হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত অটো গাড়ির মালিককে অবগত করুন।’
ফেসবুকের কল্যাণে লেখাটি ছড়িয়ে পড়লে অটো চালক ডল মিয়া’র পরিচিত জনের নজরে আসে। এই খবর পেয়ে ডল মিয়া দ্রুত বেতমারী বিলে ফেলে রাখা আটোর কাছে গিয়ে যথাযথ তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে তার মালিকানা নিশ্চিত করেন। পরে স্থানীয় ২/৩ জন অটোচালকের সহযোগিতায় রশি বেঁধে টেনে অটোটি ডল মিয়ার বাড়িতে নেওয়া হয়। এখন অটোটি চালানোর উপযোগী করতে হলে এরপিছনে লক্ষাধিক টাকা খরচ করতে হবে, যা ডল মিয়ার সাধ্যের বাহিরে।
ডল মিয়া বলেন, ‘এতো টাকা দিয়ে ব্যাটারী ও কন্টোল বক্স কিনে ও ভাঙ্গা বাম্পার ঠিক করার সামর্থ্য থাকলে কি অটো চালিয়ে সংসার চালাই? ছোট কোন ব্যবসা করতে পারতাম। তবে শুরুতে বেশি আয়ের আশায় আবেগে অটো কিনে বাধ্য হয়ে চালাতে হয়েছে। এখন বিক্রি করে দিতে হবে, কারন লক্ষাধিক টাকায় অটোটি ঠিক করা আমার পক্ষে অসম্ভব’। তবে অটো চালানোর পাশাপাশি সওয়াবের আশায় বিয়ের ঘটকের কাজও করেন। আর মাঝেমধ্যে বর-কনে পক্ষ থেকেও বকশিস পেয়ে থাকেন বলে তিনি জানান। অটো চালাতে না পারায় এবং অটোটি বিক্রি করার সম্ভাবনা কম থাকায় হতাশায় কাটছে তার দিন।