বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি’র জেলা কমিটি গঠন: সভাপতি নজরুল, সম্পাদক হযরত নকলায় ফাহিম চৌধুরীর গণ সংযোগ ও পথসভায় জনতার ঢল নকলায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের আহবান নকলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন’র মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন ছাত্রনেতা জুবায়েদ হত্যার বিচার দাবিতে নকলায় কলেজ ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা পানিফলে কয়েকগুণ লাভ, বানিজ্যিক ভাবে চাষে ঝুঁকছেন কৃষক নকলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন আর নেই নকলায় শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন জোরদারে স্থানীয় পর্যায়ে করনীয় বিষয়ক সভা আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে একমত পোষণ করে বিএনপি’র বিবৃতি মেয়াদহীন ব্যবহার যোগ্য ডেটা ও মিনিটে মেয়াদ কেন?

ডিজিটাল সাইনবোর্ডে অজ্ঞাত কারনে অনাকাঙ্খিত লেখা ভেসে ওঠায় হয়রানি বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • প্রকাশের সময় | শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৪১ বার পঠিত

গত বছরের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে নিষিদ্ধ করা হয় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে। দেশ পরিচালনায় নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস-কে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সাধারণ জনগনের মনে শান্তির বার্তা পৌঁছে যায়। শান্তির আশায় বাংলার জনগন স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়েন। কিন্তু বিভিন্ন ভাবে এই সরকারের ব্যর্থতা প্রমান করতে ও বিএনপি-জামায়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পায়তারা করছে কুচক্রীমহল।

তথ্য মতে, যেসকল প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডকে টার্গেট করে এমন করা হয় বা হচ্ছে, তারা অধিকাংশরাই আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। এর অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্থাপনাতে লাগানো ডিজিটাল সাইনবোর্ডকে ব্যবহার করা হয়। চক্রান্তকারীরা ডিজিটাল সাইবোর্ড হ্যাক করে প্রাতিষ্ঠানিক নির্ধারিত লেখার সাথে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের স্লোগান লিখে দিয়ে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। এসব লেখার জেরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিষয়টি হয়তোবা নাবুঝে সংশ্লিষ্ট প্রায় প্রতিষ্ঠানে হামলা-মামলাসহ অপ্রীতিকর ঘটনায় লিপ্ত হন। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী জনগন ও সাধারণ মানুষের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাদেয়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর খুলনা রেলস্টেশনের ডিজিটাল স্ক্রিনে ‘ছাত্রলীগ ফিরে আসবে’ এই বার্তাকে কেন্দ্রে করে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় একজনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শনিবার রাতে খুলনা রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।

৩১ ডিসেম্বর নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘আওয়ামী লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে; জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’-এমন লেখা ভেসে ওঠার জেরে ওই হাসপাতালটিতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাসহ জেল জরিমানার ঘটনা ঘটে।

১ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ফিরে আসার একটি বার্তা সংশ্লিষ্ট লেখা ভেসে ওঠে। যা এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

৪ জানুয়ারি নড়াইলের লোহাগড়ায় সরকারি আদর্শ কলেজের ডিজিটাল বোর্ডে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একটি বার্তা দেখা যায়। বার্তায় বলা হয়, ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে।’ এছাড়াও ওই বোর্ডে আরো ভেসে ওঠে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা আবার আসবে বীরের বেশে।’ এনিয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

৬ জানুয়ারি সোমবার মাগরিবের নামাজের পর সাতক্ষীরার কলারোয়ার ইউরেকা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখা ভেসে উঠতে দেখা যায়। এনিয়ে এলাকায় দফায় দফায় অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভব হয়।

৮ জানুয়ারি শেরপুর সদর উপজেলার জেলা শহরের মুন্সিবাজার এলাকার রাজ ক্রোকারিজ অ্যান্ড গিফট শপ-এর ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখা ভেসে উঠে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ দোকানমালিকসহ দুইজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন।

১১ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর পৌর সভার লক্ষীপুর আদর্শ সরকারি মহিলা ডিগ্রি কলেজের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ এমন লেখা ভেসে উঠে। এর আগে জীবননগর একটি স্কুলে মূল ফটকের সাইনবোর্ডে ‘আওয়ামী লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ এমন লেখা ভেসে ওঠেছিলো। এনিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

১৪ জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী বাজাস্থ সাইফ হোটেল নামক একটি রেস্তোঁরার ডিজিটাল সাইনবোর্ডের ভেসে উঠে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আবার ভয়ঙ্কর রূপে ফিরবে, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’ এটাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

১৯ জানুয়ারি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মেডিকেল মোড়ের হাতীবান্ধা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘জয় বাংলা, ছাত্রলীগ আবার ফিরবে’ স্লোগান প্রদর্শিত হয়। ক্লিনিকের মূল ফটকে থাকা ডিজিটাল ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আবার ফিরবে ছাত্রলীগ, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ এতে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার নজির সৃষ্টি হয়।

১৭ মার্চ খুলনা রোড মোড়ে গ্রীন লাইন হাসপাতালের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ ‘শেখ হাসিনা ফিরে আসুক’ এমন কিছু লেখা ভেসে ওঠে। এই ভেসে উঠা লেখাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

শুক্রবার রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী এলাকাস্থ সমবায় মার্কেটের একটি বিপণিবিতানের ছাদে লাগানো একটি ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘শেখ হাসিনার অপেক্ষায় বাংলাদেশ, জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু, বিএসএল বাদশা ৭১’ এমন কিছু লেখা ভেসে ওঠে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর যুবদল ও ছাত্রদলের স্থানীয় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সাইনবোর্ডটি ভাঙচুর করেন এবং ওই বিপণিবিতানের ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এ ছাড়া দফায় দফায় করা হয় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ।

১৯ মার্চ সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকার জামায়াত নেতা কর্তৃক পরিচালিত ইবনে সিনা হাসপাতালের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে হঠাৎ ভেসে উঠে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। মুহুর্তেই ভিডিও টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। ডিজিটাল সাইনবোর্ডের ওই লেখাকে কেন্দ্র করে নগরীতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব হয়।

২১ মার্চ মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের মূল ফটকের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু, লেখা ভেসে উঠে। এনিয়ে জনমনে নানান জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হয়।

সবশেষ, ২ এপ্রিল নাটোরের লালপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান সম্বলিত লেখা ভেসে উঠে। এতে লেখা ছিল ‘বাংলা আমার অহংকার, বাংলার দিকে যে তাকাবে তার চোখ উপড়ে নেওয়া হবে। জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।’ এমন লেখা সংশ্লিষ্ট ছোট একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং এলাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত এমন অগণিত ঘটনার মধ্যে প্রায় প্রতিটিকে কেন্দ্র করে হামলা, মামলা, ভাংচুর, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, জেল জরিমানাসহ নানাভাবে হয়রানির ঘটনা ঘটে। আশ্চর্য বিষয় হলো এসব ঘটনার কোনটাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। তাদের অগোচরে কে বা কারা ওইসব ডিজিটাল সাইবোর্ড হ্যাক করে বিব্রতকর লেখা লিখে দিয়ে কৌশলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করে এবং অনেক ক্ষেত্রে কুচক্রীমহল সফল হয়।

এবিষয়ে অনেক আইটি বিশেষজ্ঞ জানান, দেশের প্রায় ডিজিটাল সাইনবোর্ডের পাসওয়ার্ড ৮টি ইংরেজী ৮। সম্প্রতি শেরপুরের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হ্যাকার ও তার বন্ধুর মধ্যে কথোপকথের রেকর্ট থেকে দেশের সকল ডিজিটাল সাইনবোর্ডের পাসওয়ার্ড ৮টি ইংরেজী ৮ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অনেকে জানান, ছোট বা বড় কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক জেনে বুঝে তার প্রতিষ্ঠাসহ নিজের বা তার পরিবারের ক্ষতি চাইতে পারেন না। তাই এমন অনাকাঙ্খিত সকল বিষয়ে তদন্ত ছাড়া কাউকে হয়রানি না করার আহবান জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীসহ সুশিলজন। তাছাড়া, সরকারের ব্যর্থতা প্রমান করতে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিদেশের কাছে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পায়তারাকারীদের বিশেষ করে ডিজিটাল সাইনবোর্ডের হ্যাকারদের দ্রুত চিহৃত করে আইনের আওতায় আনার আহবান জানান তাঁরা। এতে দেশের একটা অংশে কিছুটা হলেও শান্তি ফিরে আসবে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন জানান, আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়া বা পালিয়ে থাকায় এবং দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় স্বাভাবিক কারনেই বর্তমানের বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা মাঠে বিচরন করছেন। এমনিক স্থানীয় সরকারের বিষয় গুলো তাদেরকেই দেখভাল করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের ভিতরে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা হলে বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিক ভাবেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপর বর্তাচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাদের সাথে কুচক্রীমহল মিশে থেকে কৌশলে বিভিন্ন ভাবে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করতে পায়তারা করে আসছে। কুচক্রীমহলে চক্রান্ত নাবুঝে ও সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত নাকরে ঢালাও ভাবে জনগনকে হয়রানি করলে কোন এক সময় সাধারন জনগন বিএনপি ও জামায়াতের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। তাই এদিকে বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে তীক্ষদৃষ্টি রাখার আহবানও জানান তাঁরা।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102