বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শেরপুরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি’র জেলা কমিটি গঠন: সভাপতি নজরুল, সম্পাদক হযরত নকলায় ফাহিম চৌধুরীর গণ সংযোগ ও পথসভায় জনতার ঢল নকলায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের আহবান নকলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন’র মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন ছাত্রনেতা জুবায়েদ হত্যার বিচার দাবিতে নকলায় কলেজ ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা পানিফলে কয়েকগুণ লাভ, বানিজ্যিক ভাবে চাষে ঝুঁকছেন কৃষক নকলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন আর নেই নকলায় শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন জোরদারে স্থানীয় পর্যায়ে করনীয় বিষয়ক সভা আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে একমত পোষণ করে বিএনপি’র বিবৃতি

১৫তম জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় জেলার একমাত্র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন নকলার সুমাইয়া

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
  • প্রকাশের সময় | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩
  • ২০৩০ বার পঠিত

১৫তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী জজ) হিসেবে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার কৃতি শিক্ষার্থী সুমাইয়া জান্নাত (পলি)।

১৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-১ এর জারি করা প্রজ্ঞাপনে এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা গেছে, সুমাইয়া জান্নাত ১৫তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সারাদেশের মধ্যে ৫৮তম স্থান অর্জন করেছেন।

প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, এবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা সহকারী জজ হিসেবে সারাদেশের ৯৭ জনকে সহকারী জজ হিসেবে চূড়ান্ত ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে শেরপুর জেলা থেকে একমাত্র চূড়ান্ত নিয়োগ প্রাপ্ত হলেন নকলার সুমাইয়া জান্নাত (পলি)। তাকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে সহকারী জজ পদে ময়মনসিংহ জেলায় পদায়ন করা হয়েছে।

সুমাইয়া জান্নাত ২নং নকলা ইউনিয়নের ধুকুড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মতিন ও রহিমা খাতুন দম্পত্তির ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে ষষ্ঠ সন্তান। তথা ৭ ভাই-বোনের মধ্যে সুমাইয়া ষষ্ঠ, আর ৪ বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। তার বাবা উপজেলার গৌড়দ্বার বি.এল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক ছিলেন। মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (২০২১ সাল থেকে অবসর)।

তথ্য মতে, সুমাইয়ার ৩ বোনের মধ্যে সবার বড় ও তৃতীয় বোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং ৩ ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই মাহবুবুল আলমও স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। এছাড়া বাকি বড় এক বোন গৃহিনী, বড় এক ভাই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন; আর ছোট ভাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে অধ্যয়নরত।

সুমাইয়ার দেওয়া তথ্য মতে, সে ২০১২ সালে নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমান নাম নকলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে এস.এস.সি এবং ২০১৪ সালে চৌধুরী ছবরুননেছা মহিলা কলেজ থেকে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের সহিত এইচ.এস.সি পাশ করেন। তার কাঙ্খিত বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বপ্নের বিষয় ‘আইন ও বিচার বিভাগ’-এ ভর্তির সুযোগ নাপেলেও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও বিচার বিভাগে ভর্তি হন। কৃতিত্বের সহিত এল.এল.বি (স্নাতক) ডিগ্রি অর্জনের পরে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এল.এল.এম (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

সুমাইয়া জান্নাত বলেন, ‘আমি নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার সময় এলাকার এক বড় বোনের আইন ও বিচার বিভাগে ভর্তির বিষয়ে এলাকায় সুনাম ও খ্যাতি দেখে আমি মনে মনে আমার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করি ‘আইন ও বিচার বিভাগ’-এ পড়া লেখা করার। তাছাড়া বিভিন্ন সময় সমাজে মানবাধিকার লঙ্গনসহ ঘটে যাওয়া নানান অসঙ্গতি দেখে এবিষয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমি ‘আইন ও বিচার বিভাগ’-এ পড়া লেখা করার আগ্রহের বিষয়টি পরিবারের অন্যান্যদের কাছে প্রকাশ করি। আইন ও বিচার বিভাগে পড়ালেখার প্রতি আমার আগ্রহ দেখে পরিবারের সকল সদস্যরা আমাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েছে। তাছাড়া আমার সকল শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধবসহ আত্মীয়স্বজনরাও আমাকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিয়েছেন। তবে বিশেষ করে আমার মা, সবার বড় বোন ও সবার বড় ভাইয়ের সার্বিক পরামর্শ ও সাপোর্ট আমার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে আমি করি’।

সকলের পরামর্শ ও সাপোর্টের কারনেই সুমাইয়া জান্নাত অন্যকোন পেশায় নিয়োজিত হতে মনেপ্রাণে চেষ্টা করেননি। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী জজ) হওয়াটাই ছিলো তার একমাত্র স্বপ্ন। ১৪তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মৌখিক পরীক্ষায় তিনি ছিটকে পড়েন। তাছাড়া নিজের প্রস্তুতি যাচাই করতে ২ বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা দেন তিনি। এতে প্রথমবার মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে চাকরি নাহলেও দ্বিতীয় বারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি হয়। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদানের দিনই ১৫তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী জজ) হিসেবে সুমাইয়ার চাকরি হওয়ার ফলাফল প্রকাশ হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ শেষ হতে ১০ মাস সময় লেগে যায়। এই ১০ মাস সুমাইয়া জান্নাত উপজেলার ইসলাম নগর সাইলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৫ নভেম্বর (বুধবার) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ থেকে তিনি অব্যহতি নিয়েছেন। আগামী ১৯ নভেম্বর (রোববার) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে সহকারী জজ পদে ময়মনসিংহে যোগদান করার জন্য সকল কাজ সম্পন্ন করেছেন বলেও জানান সুমাইয়া জান্নাত (পলি)। তিনি একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, ন্যায়বিচারক হয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করতে চান।

সুমাইয়ার বড় ভাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবুল আলম জানান, সুমাইয়ার ‘আইন ও বিচার বিভাগ’-এ পড়া লেখা করার আগ্রহ দেখে আমরা সবাই আশাবাদী ছিলাম যে, সুমাইয়া ঠিকই বিচারক হবেন। কারন তার আগ্রহ ও পরিশ্রমের মধ্যে কোন প্রকার ফাঁক বা গাফলতি ছিলোনা। পরিশ্রম, আগ্রহ ও ত্যাগের বিষয়ে উদাহরন হিসেবে তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির এযুগে বসবাস করেও আমার ছোট বোন সুমাইয়া দীর্ঘ্যদিন এনড্রয়েড বা স্মার্ট মোবাইল ব্যবহার করেনি। জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকেও বেড় হতনা’। একান্ত ইচ্ছা ও পরিশ্রম কখনো বৃথা যেতে পারেনা, এটা সুমাইয়া প্রমান করতে পেরেছে বলেও মাহবুবুল আলম মন্তব্য করেন।

মেয়ে সুমাইয়া জান্নাতের সাফল্যের বিষয়ে মা রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ে সহকারী জজ হওয়ায় আমি খুব আনন্দিত। তার বাবাসহ পরিবারের সবার ইচ্ছা ছিলো ৭ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কেউ একজন বিচারক হোক। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ছোট মেয়ে পরিবারের সবার ইচ্ছা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তার বাবা দেখে যেতে পারলেন না। আজ তার বাবা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। তবে এখন মেয়েটি যদি নিজ অবস্থান থেকে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা করে যায়, তাহলে তার মাধ্যমে কিছুটা হলেও অপরাধ কমতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এতেকরে সাধারণ জনগন কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন এবং তার বাবার বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে বলেও তাঁর ধারনা। মেয়ের উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন সুমাইয়া মা রহিমা খাতুনসহ পরিবারের অন্যান্যরা।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102