আমি যেটা খাবনা তা অন্যকে খাওয়াবো না। রিজেকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ কাউকে কিছু দিলে পৃথিবীর কেউ ফিরাতে পারবে না। আবার আল্লাহ নাখোশ হলে, কেউ কাউকে কিছু দিয়ে টিকিয়ে রাখতে পারবেনা। এই জগতের আিধকাংশ বড় লোক বা ধনী লোক গুলো সমাজের নিরিহ ও সহজ সরল মানুষকে ঠকিয়ে ধনাঢ্য হয়েছে। হয়েছে বড় লোক। আমাদের মতো গরীবরা সহজে অন্য মানুষকে ঠকানোর সুযোগ পাইনা। আর পাইলেও আল্লাহর ভয়ে তা করেনা। কারন, আমাদেরকে একমাত্র আল্লাহই তার রহমতের দ্বারা আজ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমাদের পর্যাপ্ত ধন সম্পদ না থাকলেও মনে অসীম শান্তি আছে। আমাদের মনে যে শান্তি আছে তা অনেক বড় ও ধনাঢ্য লোকের মনে বা পরিবারে নেই।
ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসে ফেরি করে আচার বিক্রির আয়ের মাধ্যম আম, শশা ও বড়ইয়ের (কুল) তৈরী বেশকিছু আচার রাস্তার পাশে ফেলে দিতে দেখে তার সাথে কথা বলার সময় এক আচার বিক্রেতা এইসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি যে জিনিসটা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া আচার খেতে পারবনা, তা অন্যকে খাওয়ােেত পারিনা। আমরা দরিদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীরা নষ্ট কোনকিছু অন্যের কাছে বিক্রি করিনা। যদিও বাসের যাত্রীদের কাছে নষ্ট আচার বিক্রি করলে, তারা চলার পথে নগদ টাকা দিয়ে লোভনীয় তা কিনে নিবেন। এমনকি তা আর ফেরত দেওয়ারও কোন সুযোগ পাবেন না তারা। তাতে আমার কিছু টাকা আসবে ঠিকই; তবে যখন যাত্রীরা আমার নষ্ট আচার মুখে দিবেন, তখন অবশ্যই আমাকে গালাগালি করবেন, আবার অনেকে অভিশাপ করবেন। তাছাড়া আল্লাহতো সবই জানেন এবং দেখেন। অতএব এই সামান্য কয়টা অবৈধ টাকার কারেন আমার অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই নষ্ট আচার বিক্রি না করে ফেলে দিলাম। আমাদের চাহিদা কম, তাই আমরা সব সময় সুখি।
বলছিলাম শেরপুরের নকলা উপজেলার নকলা পৌরসভার পশ্চিম জালালপৃুর এলাকার এক দরিদ্র পরিবারের কিশোর ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসে ফেরি করে আচার বিক্রেতা মো. কালাম হোসেন (কালা) এর কথা। বৃহস্পতিবার বিকেলে সোনালী ব্যাংকের বিপরীতে রাস্তার পাশে আম, শশা ও বড়ইয়ের (কুল) তৈরী বেশকিছু আচার ফেলে দিতে দেখে তার সাথে আলাপ কালে এসব কথা জানান।
আচার বিক্রেতা কালা বলেন- প্রায়ই বিভিন্ন মাধ্যমে শুনা যায়, দেশের বিভিন্ন জুস ও কোমল পানীয় জাতীয় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী কোম্পানী গুলোতে ক্ষতিকর রং ও রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রন করা হয়। ফলে উপকারের পরিবর্তে মানব শরীরের জন্য বৃহৎ ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমরা সরাসরি গাছ থেকে বিভিন্ন ফল সংগ্রহ করে তাদিয়ে আচার তৈরী করি। আচার সুস্বাদু করার জন্য মরিচ, লবন ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য নিরাপদ পদার্থ ব্যবহার করি। আমাদের তৈরীকৃত আচার সম্পূর্ণ নিরাপদ হওয়ায় বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই এই হালাল ব্যবসা করে সংসার চালাতে সহজ হয়। আমাদের আয় কম হলেও তাতেই চলে এবং যথেষ্ট তৃপ্তি পাই। হালাল ব্যবসার কারনেই আমদের প্রতি আল্লাহর রহমত আছে। তানা হলে অনেকে অবৈধ উপায়ে দৈনিক হাজার হাজার টাকা রোজগার করেও আমাদের মতো সুখে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারেন না। হারাল আয়ে আল্লাহর রহমত থাকে, আর অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকায় তা থাকেনা বলেই তারা আমাদের মতো পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শন্তিতে থাকতে পারেননা। পারেননা সঠিক সময়ে ঘুমাতে। তাদের পরিবারে শুধু অশান্তি বিরাজ করে। এটাই আল্লাহর দান বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের প্রতিটি মানুষ যদি দরিদ্র এই আচার বিক্রেতার মতো সৎ হতেন তাহলে দেশে কোন প্রকার দুর্নীতি থাকতো না বলে বঙ্গবন্ধু পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির জেলার একমাত্র সদস্য তৌহিদুর রহমান ডালিমসহ অনেকে মন্তব্য করেন। ডালিম বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানী গুলোতে ভেজাল মিশ্রণ করা হচ্ছে। যা খেয়ে বা পান করে আমরা বিভিন্ন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। তাই কোম্পানী গুলোকে সহায়তা নাদিয়ে বরং খেটে খাওয়া হালাল রোজগারকারী এসব আচার বিক্রেতার পাশে দাঁড়ানো উচিত। সহজ ও ক্ষুদ্র ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ফেরি করে আচার বিক্রেতার মতো অগণিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে স্বাবলম্বী করা যেতেপারে বলে ডালিমসহ অনেকে করেন। এতেকরে হালাল উপায়ে সততার মধ্যে থেকেও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায়; এমন নজির স্থাপন হবে। ফলে অল্প আয়ের অনেকে সৎ উপায়ে ছোট ছোট ব্যবসার মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে সুশীলজন মনে করছেন।