শেরপুরের নকলায় ভর্তূকি মূল্যের কম্বাইন হার্ভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। অধিক ফলন ও উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে কৃষি খামার যান্ত্রিকিকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে মোছারচর এলাকার নুরুল হক নামে এক কৃষকের মাঝে একটি কম্বাইন হার্ভেস্টার বিতরণ করা হয়।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরের দিকে উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ইউএও) কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী-এর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হার্ভেস্টার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন।
এসময় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (এইও) কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা (এসএপিপিও) ফকির মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) আশরাফুল আলম, উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক নাজমুল ইসলাম, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মাসুদ রানাসহ উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগন, হার্ভেস্টার বিপণন কোম্পানীর প্রতিনিধিগন উপস্থিত ছিলেন।
ইউএও কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী জানান, অধিক ফলন ও উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে কৃষি খামার যান্ত্রিকিকরণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশ ব্যাপী উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে ভর্তূকি মূল্যে কৃষকদের মাঝে কম্বাইন হার্ভেস্টার বিতরণ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে নকলা উপজেলার মোছারচর এলাকার নুরুল হক নামে এক কৃষককে একটি কম্বাইন হার্ভেস্টার বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তার হাতে হার্ভেস্টারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চাবি তুলে দেওয়া হয়। তিনি আরো জানান, প্রতিটি কম্বাইন হার্ভেস্টারে সরকারের পক্ষথেকে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভর্তূকি দেওয়া হচ্ছে। বোরো ধান কাটার মৌসুমে একদিকে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে বর্ষার আশঙ্কা। তাই জমিতে পানি জমার আগেই ধান ঘরে তুলার সুবিধার্থে এসকল হার্ভেস্টার মেশিন কৃষকের প্রদান করা হয় বলে জানান কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, সরকার খামার যান্ত্রিকিকরণ করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুত আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে তা ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশকেও এগিয়ে নিতে কৃষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। এবিষয়ে কৃষকসহ জনগণকে আরো সচেতন হবে বলে তিনি মনে করেন। এই যন্ত্র দিয়ে ধান ও গম কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করা যায়। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ ও সময় অনেক কম লাগে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মেশিনে ধান কাটার বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরেন তিনি। তিনি জানান, অল্প সময়ে সহজেই ধান কাটার এই প্রযুক্তি হাতের নাগালে পেয়ে কৃষক-কৃষাণীরা নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন। ধান কাটা ও মাড়াইয়ে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে কৃষকদের দুর্ভোগে পড়তে হবে না। কৃষকদের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে খামার যান্ত্রিকিকরণের ওপর সরকার জোর দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ যেমন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; তেমনি কৃষি শ্রমিকের সংকটের কারণে প্রায় প্রতি মৌসুমেই কৃষকদের ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। শ্রমিক সংকটের কারনে ধান কাটার উপযোগী হওয়ার পরেও কৃষকরা যথাসময়ে ধান ঘরে তুলতে পারেন না। ফলে অনেক সময় কৃষকদের ক্ষতির সম্মূখিন হতে হয়। তবে আধুনিক কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করলে কৃষকেরা এ বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এমন একটি আধুনিক কৃষি যন্ত্র হলো কম্বাইন হার্ভেস্টার। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ধান ও গম কাটা ও মাড়াইয়ের অত্যাধুনিক যন্ত্র কম্বাইন হার্ভেস্টার কৃষকদের দোড়গোড়ায় চলে এসেছে। এ যন্ত্রের সাহায্যে একসঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমছে বলে কৃষি কর্মকর্তাসহ সুবিধাভোগী কৃষকরা জানান।