ভাতে-মাছে বাঙালি। ভাত বাঙালিদের প্রধান খাদ্য। বাঙালিরা যেখানে ভাত খেয়ে বেঁচে থাকে, সেখানে জন্মের পর থেকে প্রায় ২ যুগ পার হলেও এ পর্যন্ত ভাত না খেয়েই দিব্যি জীবনযাপন করছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার মাহিদ হাসান লাভলু নামে অনার্স (সম্মান) পাস করা এক শিক্ষার্থী।
লাভলু বানেশ্বরদী ইউনিয়নের কবুতরমারী গ্রামের আলম মিয়া ও লাল ভানু দম্পতির ঘরে ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখে জন্ম গ্রহন করেন। এ দম্পতির ৩ ছেলে সন্তানের মধ্যে লাভলু সবার বড়। সে শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে গণিত বিষয়ে অনার্স (সম্মান) পাস করেন।
মাহিদ হাসান লাভলুর বাবা আলম মিয়া জানান, তার ছেলে মাহিদ হাসান লাভলু প্রায় দুই যুগধরে ভাতের পরিবের্ত সেদ্ধ ডাল ও ছোলা খেয়ে জীবন ধারন করছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার খাদ্য চাহিদা বাড়তে থাকে। লাভলুর খাবার ও সন্তানের পড়া-লেখার খরচসহ সংসারিক ব্যয় বহন করতে আলম মিয়ার পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় লাভলু নিজের পড়ালেখাসহ নিজের অন্যান্য ব্যয় বহন করতে শুরু করেন টিউশনি। সে এখন টিউশনি করে তার সকল ব্যয় চালানোসহ পরিবারিক কাজে অল্প হলেও সহায়তা করে আসছেন। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে টিউশনি কমে যাওয়ায় গত দুই বছর নিজের খরচ চালানে ছাড়া সংসারে চালাতে সহায়তা করতে পারেনি।
লাভলুর বাবা আরও জানান, লাভলু জন্ম গ্রহনের পরে ৬ মাস পর্যন্ত তার ভাত খাওয়া না খাওয়া বিষয়ে বুঝতে পারিনি। তবে ৬ মাস পরে যখন তার মুখে চালের তৈরী নরম খাবার ও ভাত দেওয়া হয়, সাথে সাথে সে বমি করে ফেলে দেয়। যতবার তার মুখে চালের তৈরী খাবার ও ভাত দেওয়া হতো, ততবারই সে বমি করে ফেলে দিত। এটাকে রোগ মনে করে পরিবারের লোকজান তাকে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তাররা কোন রোগ ধরতে পারেননি। তবে ভাত ছাড়া অন্য কোন কিছু তার মুখে দিলে কোন সমস্যা হতো না বলে তিনি জানান। এর পরে প্রায় ২ বছর ধরে শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করে বড় হতে থাকে। মাঝে মধ্যে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করলেই সে বমি করে দিত। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে আর ভাত খাওয়ানোর জন্য জোর করা হয়নি। এরপরে সে আর ভাত খেতে পারেনি। বর্তমানে তার বয়স ২২ বছর ১০ মাস হলেও এক বেলাও ভাত খাওয়া হয়নি। ভাত ও চালের তৈরী কোন খাবার খাওয়া ছাড়াই চলছে তার জীবন।
লাভলুর মা লাল ভানু জানান, জন্মের ৬ মাস পর চালের তৈরী নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করে আমরা বার বার ব্যর্থ হয়েছি। ভাতসহ চালের তৈরী খাবার খেতে না চাইলে তাকে মারধর করেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে তাকে তার চাহিদা অনুযায়ী খাবার খেতে দেয়া শুরু হয়। চালের তৈরী খাবার ছাড়া যা ভালো লাগে সে তাই-ই খায়। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ২৩ বছর হলেও সে একবারও ভাত খায়নি।
মাহিদ হাসান লাভলু জানান, সে নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং চন্দ্রকোনা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এরপরে শেরপুর সরকারি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্স (সম্মান) করেন। সে জানায় ভাত দেখলেই তার খারাপ লাগে, বমি বমি ভাব শুরু হয়। তাই সহজ লভ্য ছোলা-ই নাকি তার প্রধান খাবার হয়ে গেছে। লাভলু বলেন, ছোলা খেয়েও আমার শরীর-স্বাস্থ্য ভালো আছে, কোনো সমস্যা হচ্ছেনা। অনেক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও কোন কাজে আসেনি বলে তিনি জানান।
চিকিৎসকরা জানান, মাহিদ হাসান লাভলুর পাকস্থলিতে চালের তৈরী খাবার হয়তোবা হজম হয়না, তাই এমন হতে পারে। এটা হরমোন জনিত কোন কারন থাকতে পারে বলেও তারা ধারনা করছেন। অথবা এমনও হতে পারে যে, ছোটকাল থেকে চালের তৈরী খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে নাউঠায়, এখন তার আর পাকস্থলির জন্য চালের তৈরী খাবার প্রযোজ্য হচ্ছেনা। তবে তার বয়স বাড়ায় অল্প অল্প করে চালের তৈরী খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরীর চেষ্টা করা যেতে পারে বলে চিকিৎসকসহ অনেকে মনে করছেন। এতেকরে দিন দিন ভাতসহ চালের তৈরী অন্যান্য খাবার খেতে পারেন বলে তারা মনে করছেন।