আজ ২৫ জুলাই, সোহাগপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক নৃশংস গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিল শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাঁকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে।
পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী এদিন ভারত সীমান্তঘেঁষা এ গ্রামের সকল পুরুষ মানুষকে হত্যা করে। পুরুষ শূণ্য হওয়ায় এই গ্রামের নাম হয় বিধবাপল্লী। এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে প্রতিবছর কোরানখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। লক ডাউনের কারনে এবার সীমিত পরিসরে এই দিবসটি পালন কার হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন ময়মনসিংহের আলবদর কমান্ডার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও স্থানীয় রাজাকার কাদের ডাক্তারের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর একটি দল ১৯৭১ এর ২৫ জুলাই সকাল ৭টার দিকে সোহাগপুর গ্রাম ঘিরে ফেলে। এসময় গ্রামের পুরুষ মানুষ যাকে যেখানে পেয়েছে তাঁকেই গুলি ও ব্রাশ ফায়ার করে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। গ্রামের কিশোরী ও গৃহবধূদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায় পাক হানাদার বাহিনী। মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যে গ্রামের ১৮৭ জন পুরুষ মানুষকে হত্যা করা হয়। গণহত্যা শেষে রাজাকার আলবদররা ঘোষণা দেয় নিহতরা কাফের। এদের লাশ দাফন করা যাবে না। ফলে ভয়ে আতঙ্কে অনেকেই সেদিন তাদের স্বজনকে ফেলে রেখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যান। প্রিয় স্বজনের পড়ে থাকা লাশ শিয়াল-কুকুরে খায়। কেউ কেউ রাতের আধারে এসে গোসল, জানাজা ছাড়া গর্ত করে একসাথে অনেকের মৃতদেহ গ্রামের বিভিন্নস্থানে মশারী ও কাথা পেঁচিয়েগোপনে দাফন করেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সোহাগপুরের খবর জানতো না কেউ। এসময় ভিক্ষা করে অনেক বিধবার জীবন চলতো। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এলাকার এমপি হয়ে সর্ব প্রথম সোহাগপুরের বিধবাদের জনসম্মুখে আনেন। তিনি নিজ তহবিল থেকে শহীদ জায়াদের জন্য চাল ও ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। ছাগল কিনে দিয়ে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেন তিনি। পরে তাঁর চেষ্টায় সেনাবাহিনী, ট্রাস্ট ব্যাংক, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এসকল বিধবাদের মাসিক অর্থ সহায়তা দেওয়া শুরু করে
এই পল্লীতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ৫৬ জন বিধবা বেঁচে থাকলেও বর্তমানে ২৪ জন বিধবা মা বেঁচে আছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিধবাদের ভাগ্য বদল হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তত্তাবধানে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে সোহাগপুর গ্রামে।
এরই মধ্যে ২৯ বিধবাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ টাকা মূল্যের একটি করে পাকাবাড়ি উপহার হিসেবে দিয়েছেন। ১৪ জন বীরঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কাঁকরকান্দির বুরয়াজানি গ্রামে শহীদদের স্মরণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় করে দিয়েছেন স্থানীয় এমপি বেগম মতিয়া চৌধুরী। এছাড়াও সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার জন্য জেলা পুলিশ বিভাগের সদস্যরা তাদের বেতনের টাকা দিয়ে বিধবাদের জমি ক্রয় করে দিয়েছেন।
এদিবস উপলক্ষে সোহাগপুরের শহীদ ও বীরঙ্গনা পরিবারের সন্তানদের জন্য সরকারি ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবী জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক যোদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের স্বাক্ষী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ছফির উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিনসহ স্থানীয় অনেকে।