শেরপুরে বিষপানে সবুজা বেগম (৫৯) নামে এক বৃদ্ধা, বজ্রপাতে সুজেদা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহিনী, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মো. সাইফুল ইসলাম (২৮) নামে এক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালক, মৃগী নদীর পানিতে ডুবে তানজিলা আক্তার (১২) নামে এক কিশোরীর ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ডোবার পানিতে ডুবে আয়শা (২) নামে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
তাছাড়া ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল ঢাকায় ফেরার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের আরও ৩ জন নিহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের বাঘেরচর গ্রামের সেকান্দর আলীর ছেলে আমান উল্লাহ (৩০), মেয়ে নাজমা (৩৫) ও নাজমার মেয়ে লাল মনি (৮)। ১৭ মে সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ সকল মর্মান্তিক ঘটনা গুলো ঘটে।
বিষপানে নিহত সবুজা বেগম স্থানীয় চাঁন মিয়ার স্ত্রী। বৃদ্ধা সবুজা বেগম মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল ৫টার দিকে নিজ বাড়িতে বিষপান করেন বৃদ্ধা সবুজা বেগম। পরে পরিবারের লোকজন তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বজ্রপাতে নিহত সুজেদা বেগম উপজেলার হরিণধরা পূর্বপাড়া গ্রামেরস্থানীয় হান্নান মিয়ার স্ত্রী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত হচ্ছিল। তখন সুজেদা বেগম নিজ বসতবাড়ির সামনে গৃহস্থালীর কাজ করছিলেন। এসময় তার উপর আকস্মিক বজ্রপাত ঘটলে সুজেদা বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান।
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত সাইফুল ইসলাম উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের মাঝপাড়া এলাকার স্থানীয় দুলাল মিয়ার ছেলে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম তার ভাড়ায় চালিত ইজিবাইকটি চার্জ দিতে রবিবার রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রাখেন। সোমবার চার্জ দেওয়া ইজিবাইকের বিদ্যুৎ সংযোগ খুলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে পরিবারের লোকজন তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পানিতে ডুবে নিহত তানজিলা আক্তার উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের ধোপাঘাট এলাকার ইনসান মিয়ার মেয়ে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তানজিলা ও তার ছোট ভাই জিহাদ তাদের বাড়ির পাশে মৃগী নদীতে গোসল করতে নেমে তারা হঠাৎ পানি ডুবে যায়। পরে স্থানীয়রা শিশু জিহাদকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও নিখোঁজ হয় কিশোরী তানজিলা। সংবাদ পেয়ে স্থানীয়রা প্রায় আড়াই ঘন্টা উদ্ধার কাজ চালিয়ে তানজিলাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তানজিলাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলার গাগলাজানি গ্রামে ডোবার পানিতে ডুবে আয়শা (২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত আয়শা গাগলাজানি গ্রামের আবেদ আলীর মেয়ে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আয়শা পরিবারের সবার অজান্তে বাড়ির পাশের ডোবার পানিতে ডুবে সে মারা যায়।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনা গুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আমান উল্লাহ ঢাকায় কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। বোন পোশাক শ্রমিক নাজমা বেগম ও নাজমার স্বামী পোশাক শ্রমিক ইব্রাহিম তাদের মেয়ে লালমনিকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। ঈদের ছুটি শেষে সোমবার কর্মস্থলে ফিরতে শেরপুর থেকে বেগুন ভর্তি একটি পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকায় রওনা দেয় তারা। ত্রিশালে গিয়ে পিকআপ ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বালুভর্তি একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে পিকআপ ভ্যানটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই এ ৩ জনের মৃত্যু হয়।