আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ যেমন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; তেমনি কৃষি শ্রমিকের সংকটের কারণে প্রায় প্রতি মৌসুমেই কৃষকদের ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। শ্রমিক সংকটের কারনে ধান কাটার উপযোগী হওয়ার পরেও কৃষকরা যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারেন না। ফলে অনেক সময় কৃষকদের ক্ষতির সম্মূখিন হতে হয়। তবে আধুনিক কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করলে কৃষকেরা এ বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এমন একটি আধুনিক কৃষি যন্ত্র হলো কম্বাইন হার্ভেস্টার। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ধান ও গম কাটা ও মাড়াইয়ের অত্যাধুনিক যন্ত্র কম্বাইন হার্ভেস্টার কৃষকদের দোড়গোড়ায় চলে এসেছে। এ যন্ত্রের সাহায্যে একসঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে আসছে।
অধিক ফলন ও উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে কৃষি খামার যান্ত্রিকরণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশ ব্যাপী উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ভর্তূকি মূল্যে উপজেলা পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে কম্বাইন হার্ভেস্টার বিতরণ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে শেরপুর জেলার নকলায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং কৃষি যন্ত্রপাতিতে উন্নয়ন সহায়তা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং সেল-এর তত্তাবধায়নে পরিচালন বাজেটের আওয়াতায় উন্নয়ন সহায়তার লক্ষ্যে সরকারি ৫০ শতাংশ ভূর্তুকি মূল্যে ২জন কৃষকের মাঝে একটি করে ২টি মেশিন প্রদান করা হয়।
এ উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এক বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন, নকলা ইউনিয়নের ধামনা গ্রামের কৃষক শাহিনুর ইসলাম ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের কৃষক আলম মিয়ার হাতে কম্বাইন হার্ভেস্টারের চাবি ও কাগজপত্রাদি তুলেদেন। এসময় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদার, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাসসহ স্থানীয় অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, আগ্রহের সাথে আবেদন করা কৃষকদের মধ্য থেকে এ মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৬টি কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিনের চাহিদা দফতরে পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু ৩টি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার ২টি বিতরণ করা হয়েছে, বাকি একটি হারভেস্টার মেশিন বৃহস্পতিবার হস্তান্তর করা হবে। তিনি জানান, বিতরণকৃত প্রতিটি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের বাজার মূল্য ২৮ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা। প্রতিটি কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিনে সরকার সর্বোচ্চ ১৪ লাখ টাকা ভর্তুকি প্রদান করেছে। এ যন্ত্র দিয়ে একই সঙ্গে দৈনিক প্রায় ৮ একর থেকে ১০ একর জমির ধান ও গম কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করা যায়। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ ও সময় অনেক কম লাগে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মেশিনে ধান কাটার বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরেন তিনি। তনি জানান, অল্প সময়ে সহজেই ধান কাটার এই প্রযুক্তি হাতের নাগালে পেয়ে কৃষক ও কৃষাণীরা খুব খুশি হয়েছেন। করোনার কারণে একদিকে শ্রমিক সংকট। অন্যদিকে বর্ষার আশঙ্কা। তাই জমিতে পানি জমার আগেই ধান ঘরে তুলার সুবিধার্থে এসকল হার্ভেস্টার মেশিন কৃষকদের প্রদান করা হয় বলে জানান কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, দেশের জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে কমছে কৃষিজমি। তাই উৎপাদন খরচ কমিয়ে অধিক ফলনের জন্য প্রয়োজন কৃষিজমিতে উন্নত প্রযুুক্তির ব্যবহার। এতে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতের পাশাপাশি কৃষকেরা লাভবান হবেন। কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা তাঁদের মাঠ থেকে পাকা ধান কাটতে পারছেন না। এখন পর্যন্ত মাত্র ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে কৃষকদের দুর্ভোগে পড়তে হবে না। কৃষকদের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে খামার যান্ত্রিকরণের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, কৃষি খামার যান্ত্রিকরণ এখন সময়ের দাবি। সরকার খামার যান্ত্রিকরণ করতে কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুত আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে তা ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশকেও এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে হবে। এবিষয়ে কৃষকসহ জনগণকে সচেতন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।