বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শেরপুরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি’র জেলা কমিটি গঠন: সভাপতি নজরুল, সম্পাদক হযরত নকলায় ফাহিম চৌধুরীর গণ সংযোগ ও পথসভায় জনতার ঢল নকলায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের আহবান নকলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন’র মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন ছাত্রনেতা জুবায়েদ হত্যার বিচার দাবিতে নকলায় কলেজ ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা পানিফলে কয়েকগুণ লাভ, বানিজ্যিক ভাবে চাষে ঝুঁকছেন কৃষক নকলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন আর নেই নকলায় শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন জোরদারে স্থানীয় পর্যায়ে করনীয় বিষয়ক সভা আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে একমত পোষণ করে বিএনপি’র বিবৃতি

নকলায় সমতলের চা বাগান পরিদর্শনে এসে চা-কে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিভূক্ত করার মৌন দাবী উত্থাপন

রিপোর্টারঃ
  • প্রকাশের সময় | বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৬৮৩ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় সমতলে চাষ করা চা বাগান পরিদর্শনে এসে কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা-উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা চা শিল্পকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিভূক্ত করার জন্য মৌন দাবী উত্থাপন করেছেন। দাবীটি আপাতত দৃষ্টিতে অনেকের কাছে অসঙ্গতীপূর্ণ মনে হলেও, প্রকৃত পক্ষে উত্থাপিত দাবীটি কৃষি অর্থনীতির জন্য উন্নয়ন মূলক দাবী বলেই মনে করছেন সুশীলজনরা।

৩০ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরের দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের রামেরকান্দি গ্রামের তরুন উদ্যেক্তা মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন সাগরের শখের চা বাগান পরিদর্শনে এসে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস এ যৌক্তিক দাবীটি উত্থাপন করেন। এসময় শেরপুর খামার বাড়ীর উপপরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ ড. মোহিত কুমার দে, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) মো. জালাল উদ্দিনসহ স্থানীয় কৃষক উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে তাঁরা নকলা কৃষি অফিসে ফিরে এসে কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস সর্ববৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তাঁর নিজের টাইম লাইনে দাবী সম্বলিত একটি লেখা পোষ্ট করেন।

নিচে তাঁর লেখাটি হুবহু তোলে দেওয়া হলো-
“চায়ের দেশে স্বাগতম; সেই চায়ের দেশ বলতে চোখের সামনে ভেসে উঠে সিলেটের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গর উপজেলার চা বাগানের চিত্র। স্বল্প পরিসরে সেরকমই একটি চিত্র আঁকার চেষ্টা করেছেন নকলা উপজেলার টালকী ইউনিয়নের রামেরকান্দি গ্রামের এক তরুন উদ্যেক্তা মোঃ রুকন উদ্দিন সাগর। ১.২০ একর জমিতে তার এই চায়ের ক্যানভাস। স্থানীয় প্রযুক্তির প্রয়োগে হচ্ছে চায়ের প্রক্রিয়াজাতকরণ। চায়ের ফ্লেভারও মন্দ লাগেনি চা পানে তাই মনে হলো। ছায়াযুক্ত অফলা জায়গাগুলো চা চাষের আওতায় আনা সম্ভব। চা শিল্পকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিভূক্ত করে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে চা চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে চা শিল্পের সম্ভাবনার দ্বার আরও প্রসারিত হতে পারে। চা বাগান পরিদর্শনে ছিলেন, শ্রদ্ধাভাজন উপপরিচালক, কৃষিবিদ ড. মোহিত কুমার দে স্যার, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন ও স্থানীয় কৃষকগন।”

জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে চা চাষের গোড়াপত্তন হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম পাহাড়ী টিলার চা বাগান, যা ১৯৫৭ সালে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে আসে। দুইটি পাতা একটি কুঁড়িরদেশ সিলেট হলে, শ্রীমঙ্গল হবে তার রাজধানী। তবে কৃষি সম্ভাবনাময় এদেশে সমতল ভূমিতেও চা চাষ করে অনেকেই সফল হয়েছেন। শেরপুর জেলার নকলা উপজেলাধীন টালকী ইউনিয়নের রামেরকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন সাগর তাদের একজন। শখের বসে চাষ করা তাঁর চা বাগান থেকে কয়েক বছর আগে থেকে চা উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি চা পাতা স্থানীয় বাজারে ও চায়ের দোকানে ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। তাকে অনুকরন করে অনেকেই কাঠ বা ফলজ বাগানে চা চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

সাগরের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালে লালমনির হাটে ভ্রমন কালে শখের বশে চা গাছের কাটিং করা কয়েকটি চারা এনে বাড়ির আঙ্গিনায় রোপন করেছিলেন। চা গাছের বেড়ে উঠা দেখে তিনি চারার যত্ন বাড়িয়ে দেন। দুই বছর পরে বেশ কিছু চা পাতা তুলে পরীক্ষা মূলক ভাবে নিজস্ব প্রযুক্তিতে চা বানিয়ে পরিবারের সবাই পান করেন। সবার কাছে ওই চা সেরা মানের মনে হওয়ায় সমতলে বানিজ্যিক ভাবে চা চাষের নেশা চেপে বসে তার। পরে ২০১২ সালে তার নেশাকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পঞ্চগড় থেকে ৭ হাজার চা চারা কিনে আনেন। তাছাড়া চা চাষের প্রাথমিক ধারনা ও কৌশলের জেনে এসে বাড়ীর আঙ্গীনার পতিত জমিতে ও ফলজ বাগানের ছায়ায় প্রায় ২ একর জমিতে বাগান আকারে রোপন করে তিন শ্রমিক নিয়ে সেবা করা শুরু করেন। তিন বছরের মাথায় বাগানের চেহেরা পরিবর্তন হয়ে যায়। বাড়ীর আশেপাশের সারা এলাকা জুড়ে সবুজ চা গাছে ছেয়ে যায়। তিনি নিজস্ব পদ্ধতি ও পরিকল্পনা মোতাবেক ওয়ার্কশপের মেশিনের মাধ্যমে চা পাতা শুকানো, কাটা ও গুটি করার মেশিন তৈরী করেন।

প্রথমে কচি পাতা গুলো হালকা শুকিয়ে নিজের তৈরী মেশিন দিয়ে পাতাগুলো কুচি কুচি করে কাটার পরে গুটি করার মেশিনে চা পাতির আকার দেন। বর্তমানে তিনি বিশেষ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিকর রং ও ঔষুধ মিশ্রণ ছাড়াই চা উৎপাদন করে সাগর টি নামে হাতে প্যাকেট জাত করে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করছেন। সাগর চা এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় বাজার থেকে উপজেলাব্যাপী। প্রতি সপ্তাহে ৩০ কেজি থেকে ৪০ কেজি করে চা তৈরী করে বাজার জাত করতে পারছেন। সাগর বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জেলার অনেকেই চা চাষ করবেন। ফলে কোন এক সময় শেরপুর জেলাতে চা শিল্প গড়ে উঠতে পাড়ে বলে মনে আশাব্যক্ত করেন তিনি। তাতে দেশের পতিত জমি কৃষির আওতায় আসবে। তাছাড়া সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। তাতে দেশের অর্থনৈতির চাকা আরো সচল হবে বলে মনে করছেন সুধিজনরা।

রাসায়নিক পদার্থ ও রং মিশানো ছাড়া নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরী করা সাগর টি নামীয় চা স্থানীয় বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দিন দিন কদর বাড়ছে। বর্তমানে তার চায়ের বাগানে ৬ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। রোকন উদ্দিন সাগর চা চাষের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে মাছ চাষ ও দুগ্ধ গরুর খামার করেছেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জনা গেছে, ২০০২ সালে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদ দেশে ও টিলার ওপরে চা চাষের সম্ভাবনা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল ২২ থেকে ২৪ এপ্রিলে পরিদর্শন করেন। তাদের প্রতিবেদন অনুুযায়ী জেলার ৭হাজার হেক্টর পাহাড়ী জমিতে চা চাষ করা মতো উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। এই লক্ষ্যে ওই এলাকায় চা চাষের একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহনের প্রস্তাবও করেন প্রতিনিধি দল; কিন্তু অজ্ঞাত কারনে তা ফাইল বন্দি রয়েযায়। যদিও বর্তমানে একটি কোম্পানী এসব অঞ্চলে চা চাষ শুরু করেছেন।

যে সব জমি চা চাষের উপযোগী সে সব জমিতে অন্য কোন লাভজনক চাষ করা সম্ভব নয়। তাই এমনসব জায়গায় এই চা চাষ শুরু করতে পারলে কৃষি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধান হতো বলে মনে করেন উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ।

এবিষয়ে শেরপুর খামার বাড়ীর উপপরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ ড. মোহিত কুমার দে বলেন, নকলা উপজেলার মতো সমতল ভূমিতে চা চাষ করে সফল হওয়া বিরল দৃষ্টান্ত। সাগরের মত সারা দেশের সকল পতিত বা অনাবাদী জমিতে বিশেষ করে ফলজ ও কাঠের বাগানে চা বাগান গড়ে তুলতে পারলে কৃষি উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আসবে। তাছাড়া সারা দেশে নতুন করে লাখো কর্মসংস্থান সৃষ্টির গভীর সম্ভাবনাতো আছেই।

কৃষি বান্ধব সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে শেরপুরে গড়ে উঠতে পারে চা শিল্প, দুর হতে পারে বেকারত্ব। সাগরের মতো সফল উদ্যোক্তার পরিচিতি পেতে পারেন হাজারো বেকার তরুণ। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি কৃষি উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আসেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকসহ অনেকে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102