নিজস্ব প্রতিবেদক:
চার দেওয়ালের মধ্যে বসে বা অফিসের রুটিন মোতাবেক কাজ করতে করতে প্রায়ই মনে হয় প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে। প্রাকৃতিক কোন খোলামেলা পরিবেশে অফিসের বাহিরে তথা দূরে কোথাও বা প্রাকৃতিক কোন পরিবেশে হারিয়ে যেতে পারলে মন্দ হয় না!
খবরের কাগজে যখন কোন মনোরম পরিবেশের দৃশ্য বা অরণ্যের ছবি দেখা যায়, তখন মনে হয় সবাই মিলে যদি সেখানে ঘুরে আসা যেতো, কতইনা আনন্দ হতো! ঝরনার ছবি দেখে করুণ চোখে চেয়ে থাকা, সাগরের ছবি দেখে বুকের ভেতরটা প্রকৃতি প্রেমীদের বুক হাহাকার করে ওঠে, অরণ্যের ছবি দেখে মনে হয় কিছুক্ষনের জন্য হলেও হারিয়ে যেতে। হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দিন কাটে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এই স্বপ্ন আরও গভীর হয়।
তবে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃষিবিদদের এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। সত্যিই একদিন সবকিছু রেখে ঘুরে বেড়ানোর দিন আসে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃষিবিদ পরিবার সদস্যদের। আর এ সুযোগটাও কিনা হয় শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ কৃষিবিদ পরিবারের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বলছি ২৬ ডিসেম্বর শনিবার বৃহত্তর ময়মনসিংহ কৃষিবিদ পরিবারের পুনর্মিলনীর কথা।
এই একটা দিন আনন্দ করা এবং সকল কৃষিবিদদের পরিবার পরিজন নিয়ে পাহাড়ে উঠা-নামার সময় সামান্য চিন্তা ছাড়া কারও তেমন কোনো ভাবনা ছিলোনা। বৃহত্তর ময়মনসিংহ কৃষিবিদ পরিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের পুনর্মিলনীর উপলক্ষে ভারত-বাংলার সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্কের বিশাল পাহার ও বনে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ আসে। এই দিনটিতে যা হয় তার সবটুকুই আনন্দ আর আনন্দ। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বনের মাঝে হারিয়ে যাওয়া, অনেক হাসি, গান, আড্ডা, গল্প, সবাই একসাথে বসে খাওয়া, র্যাফেল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এযেন পার্থীব জগতে অসীম আনন্দ।
এ দিনের শেষ বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট স্থানে সবাই একসাথে বসে খাওয়া হয়। প্রায়ই হয়তো সকলেরই এরকম খাবার খাওয়া হয়, কিন্তু এতবড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের এলাকার সকল কৃষিবিদরা একসাথে খাবার খাওয়ার সুযোগ কমই মিলে। তাছাড়া এতগুলো কর্মজীবী তথা দেশের কৃষি অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তির এতগুলো কর্মঠ মানুষ একসাথে বসে এভাবে খাবার খাওয়া সচরাচর হয়না। খাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নেয়ার পালা। কিছুক্ষণ চলে ঘাসের ওপরে বা চেয়ারে বসে বা গাড়ীর সিটে একটু গড়াগড়ি। ছোট ছোট দল হয়ে গল্প, আড্ডা, ছবি তোলা, সুরেলা আর বে-সুরেলা গলায় গান আর অযথাই হাসাহাসি। এরই মধ্যে ক্রমেই দিন শেষ হতে থাকে, সকলের মনটা বেদনায় ভারাক্রান্ত হতে থাকে। কারন ফিরার সময় হয়ে আসে।
বাড়ি ফিরার জন্য প্রস্তুতির আগে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া ময়মনসিংহ কৃষিবিদ পারিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত সিনিয়র কৃষিবিদ পরিবারের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। সকলেই এ আনন্দ ভ্রমনকে স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে ফটো সেশনে অংশনেন। ফটো সেশনে অংশ গ্রহন কারীদের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলহাজ্ব কৃষিবিদ মো. আসাদুল্লাহ, খাদ্য সচিব নাজমা আরা খানুম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বিএডিসি ঢাকার চেয়ারম্যান কৃষিবিদ মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল মাজেদ, শেরপুর খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মোহিত কুমার দে, ময়মনসিংহ খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মতিউর রহমান, নেত্রকোনা খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান, জামালপুর খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম, টাঙ্গাইল খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবুল বাশার, কিশোরগঞ্জ খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল আলম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)’র প্রধান কার্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাসরীন আক্তার, শেরপুর বিএডিসি হিমাগারের উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) নালিতাবাড়ী উপ-কেন্দ্রের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহবুবুল ইসলাম টুটুন, শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোছা. রুবাইয়া ইয়াসমীন, নকলা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস, নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আলমগীর কবীর, ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হুমায়ূন কবীর, শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হুমায়ূন দিলদার, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুলতানা লায়লা তাসনীম, কৃষিবিদ শোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনিসহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও শিক্ষকবৃন্দ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), মৃত্তিকা সম্পদ ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)-এর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাগন ও তাদের পরিবার পরিজন উল্লেখ্যযোগ্য। এদের নিজ নিজ পরিবার পরিজন নিয়ে ইচ্ছা অনুযায়ী ঘুরাঘুরি, ফটো সেশন, গান, আড্ডায় পুরোসময় মাতিয়ে রেখেছিলেন মধুটিলা ইকোপার্কটি। ভ্রমন পিপাসু বৃহত্তর ময়মনসিংহ কৃষিবিদ পরিবারের সদস্যরা মিলে বিশাল বহরে মাতিয়ে গেলেন শেরপুর জেলার এ ইকোপার্কটি। এ দিনটি হয়তো অনেকের কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।