সমকালীন বাংলা ডেস্কঃ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের লৌহ খনিটি আবিস্কারের অর্ধশত বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে । অথচ আজও খনিটি থেকে লৌহ উত্তোলনের বাস্তব সম্মত কোন উদ্যেগ গ্রহন করা হয়নি । খনিটি যেন অদৃশ্য কারণে দেশবাসির দৃষ্টির অন্তরালে রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। অথচ এই খনি থেকে লৌহ উত্তোলন করা হলে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও দেশের অর্থনীতিতে এক নুতন মাত্রা সংযোজন সম্ভব বলে সচেতন মহল মনে করেন। দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, এই লৌহ খনিটি আবিস্কারের চমকপ্রদ একটি কাহিনী রয়েছে। ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধের পরপরই তৎকালিন পাকিস্থান খনিজ সম্পদ বিভাগের একদল কর্মকর্তা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যচিত্রানুযায়ী একটি বিমান ও গাড়ির বহর নিয়ে প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার আয়োতনের এই বিশাল মাঠে (পাথারে) আসেন। বিমানের নীচে ঢেঁকির মতো একটি বিরাট শক্তিশালী চুম্বক দন্ড ঝুলিয়ে বিমানটিকে অনেকটা নীচু করে পাথারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। এক পর্যায়ে বিমানের ঝুলন্ত চুম্বক দন্ড ছোট পাহাড়পুর গ্রামের আব্দুল ছাত্তার ও আবুল ফজলের মালিকানাধীন জমির উপর এসে আর্কষিত হয়ে বিমানটিকে বারবার মাটির দিকে টেনে নিতে চেষ্টা করে। এ পরীক্ষার ফলে পাকিস্থানের খনিজ বিজ্ঞানীরা এখানে লোহার খনির উৎস হিসাবে অনেকটা নিশ্চিত হয়ে এ জমির উপর কংক্রিটের ঢালাই করে চিহ্ন দিয়ে এলাকার প্রাথমিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করে চলে যান। পাহাড়পুর গ্রামের মফিজ (৮০) বছর বয়সি প্রবীণ ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানাযায়, প্রথম বিজ্ঞান জরিপ সম্পন্নের পরের বছর পাকিস্থান খনিজ বিভাগের লোকজন এসে চিহ্নিত স্থানে খনন করেন। ওই বছরে তারা কয়েক মাস ধরে ভেলমারী মাঠ থেকে পূর্ব উত্তরে কেশবপুর, ছোট পাহাড় পুরের ৩ কিঃমিঃ ও কেশবপুর, ছোট পাহাড়পুর এবং প্রথম ডাঙ্গা গ্রাম পশ্চিমে পবন পাড়া, দক্ষিনে সদরা কুতুবপুর পর্যন্ত বিস্তির্ণ এলাকার অসংখ্য স্থানে পাইপ বসিয়ে লোহার খনির সন্ধান লাভ করেন। এ সময় অনুসন্ধান কাজে পাইপের ভিতর দিয়ে মাটির গভীরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে এলাকার অনেকের মাটির কুয়া অর্থাৎ ইন্দিরা ভেঙ্গে পড়ে। দ্বিতীয় বছর পাইপ খননের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা জরিপ সম্পন্ন করে তারা চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সাল নাগাদ পাকিস্থান খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা একদল বিদেশী খনিজ বিশেষজ্ঞসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির বিশাল যানবাহনের বহর ও পরিবার পরিজনসহ এসে পার্শ্ববর্তী পানবাজার হাই স্কুল মাঠে ক্যাম্প স্থাপন করেন। এরপর তারা সন্ধান প্রাপ্ত লোহার উপাদান উত্তোলনের জন্য বড় বড় পাইপ ভেলামারি মাঠের বিভিন্ন স্থানে পাইপের মাধ্যমে উত্তোলনকৃত লোহার শক্ত লোহার গাঢ় লাল উপাদান এলাকার কৌতুহলি সব মানুষের হাতে তুলে দেন। এসময় খনিজ বিজ্ঞাণীরা মন্তব্য করেন, এ খনি থেকে আহরিত লোহা বিশ্বের খনিগুলোর অন্যতম এবং উৎকৃষ্ট মানের হবে। সেই সময় খনির সন্ধান উপলক্ষে এ এলাকায় কয়েকমাস ধরে মেলা বসে, যা খনি মেলা হিসাবে পরিচিতি পায়। সে সময় খনিজ কর্মকর্তারা এলাকাবাসিকে জানান, মাটির ৯শ ফুট নিচে থেকে ২২ হাজার ফুট পর্যন্ত পাইপ খনন করে তারা লোহার উন্নতমানের খনি স্তরের সন্ধান পেয়েছেন। যার বিস্তৃতি প্রায় ১০ কিঃ মিটার। তবে এ লোহা উত্তোলনের জন্য পূর্নতা আসতে আরো ২০ থেকে ২৫ বছর সময় লাগবে বলে তারা সে সময় জানিয়েছিলেন। প্রায় একশ’ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাপক খনি অনুসন্ধান কাজ শেষ করে ভেলা মারিতে স্থাপনকৃত মূল ৪ টি পাইপের উৎস মুখ কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে বন্ধ করে দিয়ে ক্যাম্প গুটিয়ে তারা চলে যান। ওই সময় তারা খনি এলাকায় সাম্ভব্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও জরিপ করেন। তারপর ২০০০ সালের প্রথম দিকে প্রেট্রোবাংলা থেকে দ্বিতীয় দফা অনুসন্ধান কাজ চালানো হয়। আর্শ্চজনক হলেও সত্য , পূর্বে আবিস্কৃত লৌহ খনির উৎস মুখে ভেলামারি স্থান হতে প্রায় ৪ কিঃ মিটার দূরে পাহাড়পুর গ্রামের পূর্ব প্রান্তে পরীক্ষামূলক খনন কাজ করে আকস্মিক ভাবে চলে যান সংশ্লিষ্ট খনন কর্মীরা। খননকাজে নিয়োজিতদের দ্বায়িত্বহীনতার কারণে পুরো বিষয়টি সে সময় ধামাচাপা পড়ে যায়। এরপর লৌহখনির অবস্থান ও উত্তোলনে ব্যাপক ভাবে কোন অনুসন্ধান চালানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট শানেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যার মিজানুর রহমান মন্টু এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ লৌহ খনি থেকে লৌহ উত্তোলনের উদ্যোগ গ্রহন করা হলে এ অঞ্চলের হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং এ অঞ্চলসহ দেশ আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে । এলাকাবাসীরাও ঠিক এনটাই প্রত্যাশা করছেন।